খবরের টেলিফোন_(প্রথম পর্ব)__©অচল_পয়সা

১★
#ইমনের আজ বেশ মন খারাপ,
গত কয়েকদিন যাবত অফিসে কাজের চাপ বেড়ে দ্বিগুন,ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় ও পাওয়া যায়না,
খুব করে চায় ইমন চাকরিটা ছেড়ে অন্য কোথাও ভাল একটা চাকরি নিতে,যেখানে বকাঝকা নেই,কাজের চাপ নেই তেমন,দিনে দু-তিনবার হলেও মা'কে ফোন করা যায়,
কিন্তু দিন যায়,সপ্তাহে পেরিয়ে মাস আসে,ইমনের চাকরির কোন গতি হয়না।
ইমনের পরিবার বলতে বড় এক বোন(বিবাহিত)
মা আর বাবা,বোনত শ্বশুরবাড়ীতে,আর মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে,পরিবারের অভাব গুছাতে ইমনের ছুটে চলা চট্টগ্রাম শহরের কোন এক ইপিজেড এলাকায়,
যেখানে হাজারো ইমন'রা স্বপ্ন দেখে স্বাবলম্বী হওয়ার।

২★
গেল কদিন ধরেই বাড়ি থেকে ফোন আসলেই ইমন একটু আঁতকে উঠে,
বাড়িতে মা অসুস্থ,বাবার শরীরও তেমন একটা ভাল না,তাই উৎকন্ঠিত থাকে।
মা'র গলায় টিউমার,এটার ইতিহাস অনেক পুরনো, প্রায় ৩৫বছর ধরে এই টিউমার গলায়,কিন্তু এতবছর সেটা কোন সমস্যা করেনি,শেষ দুই-তিনমাস ধরে মা'র কেমন জানি অস্থির লাগত,মনে হত নাকি গলায় কি জানি বড় হয়ে যাচ্ছে,খেতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে।
এসবের কিছুই ইমন জানতনা,ইমনের একমাত্র বড় বোন রাহেলা'য় এসব ইমনকে একরাতে ফোনে সবিস্তারে জানায়।
ইমন সব শুনার পর সিদ্ধান্ত নিল বাড়ি যাবে,কিন্তু তার আগেই মায়ের ফোন আসল,
মা'র ফোনকল পেয়েই কোন কিছু জিজ্ঞেস করা ছাড়াই সরাসরি মা'র অসুস্থতার কথা জানতে চাইল,
মা' হতবাক,এসব ওনার ছেলেকে কে জানাল ভেবে,
ইমন আল্টিমেটাম দিল"যদি আপনি কাল ডাক্তারের কাছে না যান,তাহলে আমি চাকরি ছেড়ে বাড়ি আসছি আপনার চিকিৎসা করাতে"এমন কথা শুনে মা চুপসে গেল,জানাল পরেরদিনই ডাক্তার দেখাবে।

৩★
ইমনের স্কুলের পরিচিত এক সিনিয়র ভাইয়া ডাক্তার আছেন,মা'কে ওনার কাছেই যেতে বলল,
মা পরেরদিনই ডাক্তার রানার কাছে গেল,
সব দেখে ডাক্তার সাহেব কিছু টেস্ট/পরীক্ষা করাতে বললেন,
ঝামেলার শুরু এখান থেকেই,
মা'র টেস্ট গুলো করাতে যেতে হবে শহরে,বাবাত নিজের থানাটাই ভাল মতন চিনেনা,
উপায় কি এখন?
এসব ভেবেই ইমনের মন খারাপ থেকে শরীর খারাপ হওয়া শুরু করল,ইমনের আছে বলতে চাচাত আর ফুপাতো ভাইরা,তাও পারিবারিক ঝামেলার কারণে ফুপাতো ভাইদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে কয়েকবছর ধরে,
ভরসা মাস্টার্স পড়ুয়া চাচাত ভাই #রাকিব,
রাকিবকে কল দিয়ে সব জানানোর পর রাকিব রাজি হল,মা'কে নিয়ে গেল শহরে,টেস্ট/পরীক্ষা করিয়ে বাড়ি ফিরল।
কয়েকদিন পর আবারো রির্পোট আনতে গেল রাকিব,
ফলাফল-মা'র থাইরয়েড ক্যান্সার ধরা পড়ল।
ডাক্তার বলল সন্দেহজনক ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া গেছে।

৪★
রমযান মাস চলতেছে তাই ইমনের অফিস শুরু হয় ভোর ৬টায়,
সেদিনের মতন ইমন অফিস শেষ করে বেরিয়ে পড়ল বোনের বাড়ির উদ্দেশ্য,
বোন-দুলাভাইয়ের সাথে মায়ের রোগ নিয়ে পরামর্শের জন্যেই ইমনের বোনের বাসায় যাওয়া।
ইমনের একমাত্র ভাগ্নে #রাইসুল তার মামার আগমনে উৎফুল্ল,বেজায় খুশি।
ইফতার করার পর ইমন ক্লান্ত,
কি ভাবে শুরু করবে বুঝতেছেনা,শুরুতে আপাকেই জানাল-
আপা মা'রত থাইরয়েড ক্যান্সার ধরা পড়েছে এখন কি করব?
দুলাভাই স্বাভাবিক, প্রতিত্তোরে বলল রোগ হয়ছে চিকিৎসা করাবি,
ইমনের চোখেমুখে রাজ্যের ক্লান্তি,উৎকন্ঠা।
দুলাভাই দেখুন আমাদেরত নগদ টাকা পয়সা নাই জমিজমা ছাড়া,তাছাড়া জমি বিক্রি করতে গেলেওত সময় লাগবে,এদিকে ডাক্তার বলল যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে,
দুলাভাই চিকিৎসার খরচের দ্বায়িত্ব নিল,
পরে দুলাভাইয়ের টাকা ফেরত দিলেই হবে।
ইমন হাফঁ ছেড়ে বাঁচল।

৫★
রাত ১১টা,
ইমনের চোখে ঘুম নেই,সারাদিন অফিস করার পর ক্লান্তিটা ইমনের গা সওয়া হয়ে গেছে।
বালিশের পাশে থাকা যন্ত্রটা ক্রিংক্রিং করে বেজে উঠল,দুলাভাইয়ের ফোন,
হ্যালো..কাল ১২টার আগে ক্লিনিকে মা'কে নিয়ে চলে আসবি,দুপুর ২টার দিকে অপারেশন হবে"
এক নিঃশ্বাসেই যেন শেষ করল কথাটা।
রাত তখন ১১.৩০টা,এত রাতে শহর থেকে বাড়ি ফিরব কেমনে?
রুমমেট #ইলিয়াস সেরাতে আর বাড়ি আসতে দিলনা,
সেহরি খাওয়ার পর একটু আলো ফুটল,
ইমন রওয়ানা দিল বাড়ির উদ্দেশ্য,
সকাল ৭টায় বাড়ি পৌঁছাল,
মা'কে কাল রাত ১২টার পর থেকে অপারেশন করার আগ পর্যন্ত কিছু না খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে (পানি খাওয়া যাবে)
মা'র সেকি কান্না,বাড়ির সবাই মা'কে বিদায় দিল,
ইমন,দুলাভাই-আপু সবাইমিলে রওয়ানা দিল ক্লিনিকের উদ্দেশ্য,
এত কিছু ঘটতে চলছে কিন্তু ইমনের কোন আত্নীয়-স্বজন একটা ফোনও করলনা,
নানুর বাড়ি থেকেও কেউ জানতে চাইলনা,টাক-পয়সা পেল কোথায় কিংবা কোন হসপিটালে অপারেশন হবে।
#ইমন_কষ্ট_জমায়, #অনেক_কষ্ট।

চলবে.........

মন্তব্যসমূহ